Monday 3 February 2014

ডিএসইর শরিয়াহ ইনডেক্স পুঁজিবাজারে যোগ করবে নতুন মাত্রা

নাসির উদ্দিন চৌধুরী
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, সোমবার,
দীর্ঘ দিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ চালু করেছে বহুল প্রত্যাশিত ‘শরিয়াহ ইনডেক্স’। গত ২০ জানুয়ারি এ সূচক যাত্রা শুরু করে দেশের শীর্ষ পুঁজিবাজারের এ সূচক। মূলত প্রচলিত অন্যান্য বিদেশী ফান্ডের মতো সৌদি আরব ও আরব আমিরাতসহ মুসলিম বিশ্বের বিনিয়োগ আকর্ষণকে প্রধান বিবেচনায় রেখে এ সূচক চালু করা হলেও এর মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশার যেমন প্রতিফলন ঘটেছে, তেমনি এ উদ্যোগ পুঁজিবাজারে যোগ করবে নতুন মাত্রা।
বাংলাদেশে একটি বিশেষ ইসলামি বিনিয়োগ গোষ্ঠী পুঁজিবাজারকে ইসলামিক ইনডেক্সের ওপর ভিত্তি করে দেখতে চায়। এর মধ্যে যেমন রয়েছে শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, তেমনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন সংগঠন যারা নিজেদের অলস পুঁজিকে ইসলামি কাটামোর মধ্যে থেকে পুুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হতে চায়। এটা তাদের দীর্ঘ দিনের দাবি। এ ইনডেক্সের সুবিধা হলোÑ যারা শরিয়াহভিত্তিক লেনদেন বা বিনিয়োগ করে তারা মোট ইনডেক্স বা সুনির্দিষ্ট ইনডেক্স দেখে বিনিয়োগ করতে পারে না। কারণ তারা একটি নিজস্ব পোর্টফোলিও ধারণ করে। ওই পোর্টফোলিওর বাইরে তারা বিনিয়োগ করে না। তাই তাদের জন্য যদি নির্দিষ্ট কোনো ইনডেক্স থাকে, তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে সহায়ক হবে। এ ছাড়া সুদভিত্তিক পরিচালিত নয় এমন সব ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসব ইসলামিক ইনডেক্সের আওতাভুক্ত।
মুসলিম বিশ্বের বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরের এ দাবি বাস্তবায়নে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ইসলামি শরিয়াহ আইন পরিপালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি চালু করা হয় শরিয়াহ ইনডেক্স (সূচক)। এই সূচকের ভিত্তি ধরা হয়েছে এক হাজার পয়েন্ট আর ভিত্তি বছর হিসেবে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসকে বেছে নেয়া হয়েছে। তবে কোনো কোনো কোম্পানি এই সূচকে অন্তর্ভুক্ত হবে তা জানানো হয়নি। ডিএসইর অন্য দু’টি সূচকের মতোই আন্তর্জাতিক সূচক গণনা প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপির তত্ত্বাবধানেই চালু করা হয় সূচকটি।
ইতোমধ্যে ডিএসই কর্তৃপক্ষ সূচকটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসই সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি আরো বলেন, শরিয়াহভিত্তিক ইনডেক্স চালু হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নানা কারণে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারছে না। যেসব কোম্পানি এ ইনডেক্সের আওতায় রয়েছে সেগুলোয় বিনিয়োগের বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তাই ডিএসইর প থেকে দু’টি পদ্ধতিতে এসব কোম্পানিকে ইনডেক্সের আওতায় আনা হচ্ছে। এর একটি কোম্পানির প্রোডাক্ট অর্থাৎ ব্যবসার ক্যাটাগরি, অন্যটি আর্থিক বিবেচনা। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এ ইনডেক্সে অংশগ্রহণ করতে চাইলে শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনিয়োগ করতে পারবেন। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বিপুল উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে; কিন্তু ইসলামি প্রোডাক্টের স্বল্পতার কারণে আমাদের বাজারের প্রতি তারা আকৃষ্ট হয়নি। শরিয়াহ ইনডেক্স চালু হলে এ বাজারের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে।
তিনি আরো বলেন, শরিয়াহ ইনডেক্সে এ পর্যন্ত ৭০টির ওপর কোম্পানি অংশগ্রহণ করছে। যেসব কোম্পানি ইসলামি শরিয়াহ অনুসরণ করছে, এদের ইনডেক্সের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে অ্যালকোহল, সুদভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইনডেক্সের বাইরে থাকছে। যেসব কোম্পানি এ ইনডেক্সের আওতায় থাকছে, তাদের কোম্পানি পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে বা প্রোডাক্ট নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে বিনিয়োগকারীরা তা ডিএসইকে জানাতে পারবে। আমরা সে অভিযোগ শরিয়াহ বোর্ডকে অবহিত করব। শরিয়াহ বোর্ড তা পর্যালোচনা করে যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ দিকে নতুন এ ইনডেক্স চালু করায় দীর্ঘ দিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে সক্রিয় বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে সাধুবাদ জানান। এদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন সামরিক বাহিনীর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীও। এ ছাড়া রয়েছেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীও। রয়েছেন রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক। সবার প্রতিক্রিয়া ছিল ইতিবাচক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর প্রচলিত সুদের বাইরে সুদমুক্ত বিনিয়োগের একটি দরজা খুলে দিয়েছে ডিএসইর নতুন এ ইনডেক্স। এখন নির্দ্বিধায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যায়। তা ছাড়া ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত হওয়ার কারণে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বচ্ছতা বজায় থাকার সম্ভাবনা থাকবে বেশি।
একই মনোভাব প্রকাশ করলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাও। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন চাকরি করেই জীবিকা নির্বাহ করেছি। অবসরকালীন পাওয়া জীবনের সর্বশেষ অর্জনটি বিনিয়োগের একটি উপযুক্ত মাধ্যমের অপেক্ষায় ছিলাম। ডিএসইর এ উদ্যোগ আমাকে আশান্বিত করেছে। জীবনের শেষ দিনগুলোয় সুদমুক্ত বিনিয়োগই আমাকে মানসিকভাবে স্বস্তি এনে দিতে পারে

0 comments:

Post a Comment