Saturday 1 February 2014

৫ হাজার পয়েন্টের দিকে দৃষ্টি ডিএসই সূচকের

কিনতে লাভ করতে না পারলে , বিক্রি করে লাভ করা  যায়  না বললে ই  চলে

  ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, রবিবার
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির খুব বড় ধরনের পরিবর্তন না ঘটলে পুঁজিবাজারের সামনের দিনগুলো ভালো ফল বয়ে আনতে পারে এমনটি মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, যে গতিতে পুঁজিবাজারগুলো গত একটি মাস অতিক্রম করেছে তাতে বাজারের আস্থাহীনতা অনেকটাই দূর হয়েছে। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা। দুই বছর পর আবার তারা পাঁচ হাজার পয়েন্টের দোরগোড়ায় দেখছেন  দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচককে। ২০১০ সালের পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের সর্বশেষ ২০১২ সালের ২১ মে এ অবস্থানে ছিল ডিএসই সূচক। বাজারের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিচারে এ প্রত্যাশা এখন সবার মাঝে।
বিপর্যয়-পরবর্তী তিনটি বছর পার হলেও প্রকৃত অর্থে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না দেশের দুই পুঁজিবাজার। অনেকটা খুঁড়িয়ে চলতে থাকা বাজারগুলো মাঝে মধ্যে বাজেট বা বিভিন্ন উপলক্ষকে সামনে রেখে বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস পেলেও আস্থাহীনতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। দুই পা সামনে এগোতে না এগোতেই আবার হোঁচট খেয়েছে। আর এর ফলে দিনের পর দিন বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা আরো ভারী হয়েছে। এ সময় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি ছিল যখনই ডিএসই সূচক পাঁচ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি পৌঁছেছে তখনই হোঁচট খেয়েছে সূচক। পাঁচ হাজার পয়েন্টের এ মাইলফলক আর পার করা হয়ে ওঠেনি। তবে এবার তার শেষ দেখতে চান বিনিয়োগকারীরা। তাদের প্রত্যাশা ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে চলমান ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। পাঁচ হাজার পয়েন্টের ঘরে পৌঁছবে ডিএসই সূচক।  
২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর বিপর্যয় শুরুর প্রথম দিন ডিএসইর তৎকালীন প্রধান সূচকটির অবস্থান ছিল ৮ হাজার ৯১৮ দশমিক ৫১ পয়েন্টে। সেদিন সূচকটির ১৪৭ পয়েন্ট অবনতি দিয়ে যে পতন শুরু তা আর রোধ করা সম্ভব হয়নি। এর মাত্র সাত কর্মদিবস পর ১৯ ডিসেম্বর এক দিনে ফের সূচকটির ৬০০ পয়েন্টের বেশি হারায় ডিএসই। পরে শুধুই পতন আর পতন। আর টানা এ পতনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২১ মে ২০১২ তারিখের পর আর প্রধান সূচকটির পাঁচ হাজার পয়েন্টের নাগাল পায়নি ডিএসই। ওইদিন ডিএসইর সাধারণ সূচকটির অবস্থান ছিল পাঁচ হাজার ২২ দশমিক ৯৫  পয়েন্টে। ঊর্ধ্বমুখী তো আর হয়ইনি বরং পরবর্তী ১১ মাসের মাথায় ২৯ এপ্রিল ২০১৩ একই সূচকটি নেমে আসে আগের চার বছরের সর্বনিম্ন তিন হাজার ৬১৭ পয়েন্টে। 
গত দুই বছরে পুঁজিবাজারে যুক্ত হয়েছে ৩২টির মতো কোম্পানি যেগুলোর মোট ইক্যুইটি ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং এখনকার বাজার মূলধনে তা যোগ করেছে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। তার পরও টানা দরপতনের কারণে এত বড় বাজার মূলধনও ডিএসই সূচকে খুব একটা  প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না। 
এ দিকে ডিএসইর প্রধান সূচকটির যথার্থতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলের মধ্যে নানা সন্দেহ সংশয় দানা বেঁধে উঠলে গেল বছরের ২৭ জানুয়ারি চালু করা হয় ডিএসইর নতুন সূচক ডিএসইএক্স। কিন্তু নতুন সূচক চালু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে প্রত্যাশা জাগিয়েছিল তা এক ধরনের মাঠেই মারা যায়। পতন থামা দূরে থাক আরো বাড়তে থাকে পতনের গতি। ৪ হাজার ৫৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট থেকে শুরু করার মাত্র তিন মাসের মাথায় ৩০ এপ্রিল ডিএসইর নতুন এ সূচক ডিএসইএক্স নেমে আসে তিন হাজার ৪৩৮ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে। অর্থাৎ এ তিন মাসে একই সূচক হারায় ৬১২ পয়েন্ট।
সর্বশেষ বছরের শেষদিকে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক টানাপড়েন পুঁজিবাজারের গতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। দিনের পর দিন নেতিবাচক শিকার হয় পুঁজিবাজারগুলো। ডিএসইর লেনদেন নেমে আসে শত কোটি টাকায়।  
তবে নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠিত হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে শুরু করে। এর মধ্যে নতুন বছর শুরু হওয়ায় তার ইতিবাচক প্রভাবও ছিল বাজারে। সব মিলিয়ে গত এক মাস বাজারগুলো পার করে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়। এ এক মাসে ডিএসই সূচকের উন্নতি ঘটে ৫ শ’ পয়েন্টের বেশি। ৪ হাজার ২৬৬ পয়েন্ট থেকে বছর শুরু করা ডিএসইর প্রধান সূচকটি গত মঙ্গলবার পৌঁছে যায় ৪ হাজার ৭৫৮ পয়েন্টে। 
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অন্যান্য সময়ের  চেয়ে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এর আগে বরাবরই পাঁচ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি গিয়ে পুঁজিবাজার সূচক নিম্নমুখী হয়ে পড়লেও বাজারের বর্তমান বাস্তবতায় তা নাও ঘটতে পারে। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো গত তিন বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি সক্রিয়। তা ছাড়া নতুন বছর শুরু হওয়ায় তারা নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর এ অংশগ্রহণ আশান্বিত করে তুলেছে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের। পাশাপাশি বাজারে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন বিনিয়োগকারী। ফলে গত এক মাসে দুই বাজারে মাঝে মধ্যে কিছুটা মিশ্র প্রবণতা দেখা গেলেও প্রকৃত অর্থে কোনো বড় সংশোধনের ঘটনা ঘটেনি। অন্য দিকে ঘটেনি অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাও। একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের দিকেই পুঁজিবাজার এগিয়ে যাচ্ছে এমনটিই মনে করছেন তারা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সূচকের পাঁচ হাজার পয়েন্ট বা তারও বেশি এগিয়ে যাওয়া কোনো অস্বাভাবিক কিছু নয়। 
তবে তারা এ-ও মনে করেন, এ মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের যৌক্তিক আচরণই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। মৌলভিত্তিই হতে হবে তাদের প্রধান বিবেচনা। গুজব বা কানকথায় আসক্ত না হয়ে নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগই হতে পারে কম ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া  প্রতিটি বাজারেই মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সংশোধন ঘটে। সংশোধনকে বিনিয়োগসহায়ক করে নিতে পারলেই তা থেকেও মুনাফা নেয়া সম্ভব

0 comments:

Post a Comment