Monday 10 February 2014

তাৎক্ষণিক রপ্তানি আদেশ অর্ধেকে


, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪ | প্রথমআলো
অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কারণে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রতি বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ কমছে। মেলা চলাকালে ব্যবসায়ীরা বিচ্ছিন্নভাবে এ তথ্য দেন। আর সামগ্রিক পরিসংখ্যানও সেই বার্তাই দিচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবারের মেলায় তাৎক্ষণিক রপ্তানির আদেশ (স্পট অর্ডার) কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আয়োজিত এ বাণিজ্য মেলা গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে। মাসব্যাপী এ মেলা থেকে এবার তাৎক্ষণিক রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে মাত্র ৮০ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। গত বছর এটির পরিমাণ ছিল দ্বিগুণ, ১৫৭ কোটি টাকা।
মেলা চলাকালে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কয়েকটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান মেলায় আসেনি। তা ছাড়া নাম আন্তর্জাতিক হলেও মেলার পরিবেশ হাট-বাজারের মতো হয়েছে। হকাররা যত্রতত্র পণ্য নিয়ে বসে হাঁটাচলায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছেন। আবার তাঁদের বিরামহীন হাঁকডাকেও বিরক্ত হয়েছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। তবে এসব দেখেও না দেখার ভান করেন আয়োজকেরা।
গতকাল বিকেলে মেলার শেষ দিন গিয়ে দেখা গেল, অন্যান্য দিনের চেয়ে লোকসমাগম বেশি। প্রবেশপথ, ভেতরের সরু সড়ক, স্টল, প্যাভিলিয়ন কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। তার পরও বাদামবিক্রেতা থেকে শুরু করে খেলনা, পুতুল, কাপড়সহ নানা পণ্য নিয়ে বসে গেছে শত শত হকার। আর এদের ঘিরে মানুষের জটলাও কম নয়।
সাবা জুট ক্রাফটসের রুমন হোসেন গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক মেলা। এখানে পণ্য প্রদর্শন করাই মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু ঘটনা উল্টো, কে কত বেশি বিক্রি করতে পারবে এখন সেই প্রতিযোগিতাই চলে। এক মাসেও বিদেশি ক্রেতার দেখা পাইনি।’ এ জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।
অবশ্য মেলা ‘পরিপূর্ণ সফল’ বলেই দাবি করে সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু। পরে রপ্তানি আদেশ কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতবার দেশের ভেতর ও বাইরের হিসাব করে টাকার পরিমাণ বলা হয়েছিল। আর এবার শুধু বিদেশিটা বলা হয়েছে।’ অভ্যন্তরীণটা ধরলে গতবারের কাছাকাছি হবে বলে দাবি করেন তিনি।
ইপিবির এই ভাইস চেয়ারম্যানের বক্তব্য, এবারের মেলা থেকে সরকারের দেড় কোটি টাকার মূল্য সংযোজন কর বা মূসক আদায় হয়েছে।
এদিকে রপ্তানি আদেশ বৃদ্ধি কিংবা মেলাকে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক রূপ দিতেও তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। কেবল পূর্বাচলে মেলার স্থায়ী বন্দোবস্ত ছাড়া। এটিও বছরের পর বছর আটকে আছে। আপাতত অনেক ক্রেতা সমাগম, বিক্রিবাট্টা ভালো এ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাইছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভবিষ্যতে পূর্বাচলে মেলা আয়োজনের আশ্বাস দিলেন। রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি করার চেষ্টা হয়েছিল। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন সাধারণ মানুষ, তারপর ব্যবসায়ীরা। এত কিছুর পরও অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এক হাজার ৪২০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছে এক হাজার ৪৬৮ কোটি ডলার। এটি সম্ভব হওয়ার কারণ দেশের ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট দক্ষ।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ। সবশেষে মেলায় অংশ নেওয়া ৪৪টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।

0 comments:

Post a Comment