এই অঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে এখন প্রতি মণ গ্রানোলা জাতের আলু মাত্র ৭০ থেকে ৭৫ টাকা (প্রতি কেজি পৌনে দুই টাকা), কার্ডিনাল ও হল্যান্ড আলু ১১০ থেকে ১২০ টাকা ও দেশি গোল আলু ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অথচ গত বছর প্রতি মণ গ্রানোলা, কার্ডিনাল ও হল্যান্ড আলু ৪০০ টাকায় এবং দেশি গোল আলু ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে কেনাবেচা হয়েছে।
কৃষকেরা জানান, আলুর দাম কমে যাওয়ায় তাঁদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। তাই তাঁরা এখন আর খেত থেকে আলু তুলতে আগ্রহী নন। অন্যদিকে, খেত থেকে আলু তুলতে না পারায় পরবর্তী ফসল বোরো ধানের আবাদও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কালাই উপজেলার কাটাহার গ্রামের কৃষক রাজু মিয়া বলেন, ‘১৮ বিঘা জমিত গ্রানোলা আলু লাগাচি। গতবার খ্যাতত থ্যাকেই ৪০০ টেকা মণ দরে আলু বেচিচি। এইবার আলু তুলে হাটত লিয়েও ব্যাচপার পারিচ্চি না।’
বগুড়ায় সবজির সবচেয়ে বড় মোকাম মহাস্থানহাটের আড়তদার জাহিদুল ইসলাম জানান, গতবার প্রতিদিন গড়ে ২০০ ট্রাক আলু কেনাবেচা হয়েছে। এবার প্রতিদিন গড়ে ২০ ট্রাক আলুও কেনাবেচা নেই।
বিক্রি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে মহাস্থানহাটের ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে এখনো প্রচুর পরিমাণ পুরোনো আলু রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য সবজির দামও কম। এ জন্য এবার নতুন আলুর কদর কম।
একই কথা বলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এইচ এম বজলুর রশীদও। তাঁর মতে, এবার বগুড়া অঞ্চলে সবজির রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। ফলে সবজির দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় আলুর চাহিদাও এবার কিছুটা কম।
এদিকে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের ২৭টি হিমাগারে এখনো প্রায় আট লাখ ৩৫ হাজার বস্তা পুরোনো আলু অবিক্রীত রয়েছে। গত মৌসুমে ১৯৩টি হিমাগারে দুই কোটি ৩০ লাখ বস্তা আলু রেখে চরম বিপাকে পড়েছিলেন উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা। বাজারদরে ধসের কারণে তাঁদের অনেকেই হিমাগারে রাখা আলু আর তোলেননি। সে জন্য ওই আলু ফেলে দিয়ে হিমাগার খালি করেছেন কোনো কোনো হিমাগারের মালিক।
বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রংপুর অঞ্চলের ২২টি হিমাগারে প্রায় সাড়ে সাত লাখ বস্তা এবং বগুড়ার পাঁচ হিমাগারে এক লাখ বস্তা আলু অবিক্রীত রয়েছে।
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, গতবার অনেক হিমাগার থেকে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা আলু তুলতে না আসায় এসব ঋণ আদায় হয়নি। লোকসানের মুখে এবার হিমাগার চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বগুড়ার শাহসুলতান হিমাগারের মালিক আবদুল গফুর দাবি করেন, তাঁর চারটি হিমাগারে গতবার আড়াই লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হলেও এর বিপরীতে ভাড়া আদায় হয়নি।
0 comments:
Post a Comment